ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আজ। রাজ্যজুড়ে চলছে ভোটগণনা। ২৯২ কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে সবাই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নজর যেন কলকাতা থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরের নন্দীগ্রামে। হাই-প্রোফাইল এ আসনে একদিকে লড়ছেন বাংলার মুখমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানে প্রতিপক্ষ মমতারই এক সময়ের বিশ্বস্ত সেনা শুভেন্দু অধিকারী।
গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের পর দুই প্রার্থীরই দাবি বিপুল ব্যবধানে জিতবেন। মমতা বলেছেন— এই আসনে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনিই জিতবেন। আর শুভেন্দুর দাবি— তিনি অন্তত ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে মমতাকে হারাবেন।
নন্দীগ্রামে কে বিজয়ী হবেন বা এই আসনটি কার? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর দেয়া এখনও কঠিন। কারণ এখানে তৃণমূলের দাপট থাকলেও নন্দীগ্রাম অধিকারী পরিবারের বড় ঘাঁটি হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। এখানে শুভেন্দুর পক্ষে প্রচারণা চালাতে নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, মিঠুন চক্রবর্তী থেকে স্মৃতি ইরানি পর্যন্ত এসেছিলেন।
তবে জনসংযোগের কোনো ঘাটতি রাখেননি মমতা ব্যানার্জিও। কলকাতার টেলিভিশনের সিরিয়ালের পরিচিত মুখ ও টালিগঞ্জের তারকারা এখানে ‘দিদির দূত’ হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই নন্দীগ্রামের। দীর্ঘদিনের বাম ক্ষমতার পরিবর্তনে নন্দীগ্রাম ছিল অনুঘটক। আর গত ১০ বছরেরও বেশি সময় নন্দীগ্রামে তৃণমূলের হাল ধরে রেখেছিল শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু সেই শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে এবং বিজেপির হয়েই নির্বাচন করছেন।
অন্যদিকে শুভেন্দুকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই নিজেই এখানকার প্রার্থী হয়েছেন ব্যানার্জি। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাল্টা চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন শুভেন্দু। কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষার পরই জানা যাবে পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জে কে হলেন বিজয়ী।
কী বলছে বুথফেরত জরিপ
হাই-প্রোফাইল নন্দীগ্রাম আসন বুথফেরত জরিপ করেছে ‘এবিপি আনন্দ-সিভোটার’। জরিপে নন্দীগ্রামে তারা মমতা ব্যানার্জিকেই এগিয়ে রেখেছেন। জরিপে মমতা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দুকে ৩০-৫০ হাজার ভোটে হারাতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়। শেষ খবর অনুযায়ী ভোটের হিসাবে নন্দীগ্রামে এগিয়ে রয়েছেন মমতা।
তবে ২০১৬ সালে এ আসনে ৮১ হাজার ২৩০ ভোট পেয়ে জয়ী হওয়া শুভেন্দু বুথফেরত জরিপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আজ রোববার ভোট গণনা শুরু হতেই সকালেই হলদিয়া কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন। জানিয়েছেন, ফল না আসা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে পাহারা দেবেন সব কেন্দ্রে।
কিন্তু তৃণমূল স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে— ২০১৬ সালের নির্বাচনে শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিআইয়ের আবদুল কবির শেখ। বিজেপি প্রার্থী গতবারের নির্বাচনে সম্মান বাঁচানোর মতো ভোট পাননি।
তবে এবার শুভেন্দু সেই বিজেপিরই প্রার্থী। আর তার বিপরীতে তৃণমূলের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রয়েছে বামজোটেরও প্রার্থী। ফলে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র দাবি করা শুভেন্দুকে সেখানকার মানুষ কতটা ভালোবাসেন তা দেখতে কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।
এদিকে, অধিকাংশ বুথফেরত জরিপে আভাস পাওয়া গেছে এবারও মমতার তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হতে পারে। এবিপি আনন্দ-সি ভোটার জরিপে তৃণমূল পেতে পারে ১৫২-১৬৪ আসন। আর বিজেপি ১০৯-১২১ এবং সংযুক্ত মোর্চা ১৪-১৫টি আসন পেতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চূড়ান্ত রায় জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা।
গত ২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আরও ৭ দফা ভোটগ্রহণ করা হয়। সবশেষ গত ২৯ এপ্রিল ৮ম বা শেষ দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।